Salauddin Eyubi Episode 10 Bangla Subtitle
সিরিজঃ কুদুস ফাতিহী সালাউদ্দিন আইয়ুবী।
সিজনঃ ০১ বাংলা সাবটাইটেল
Salauddin Eyubi Episode 10 Bangla Subtitle
১১৬৩ সালে তার জেনগি বংশীয় ঊর্ধ্বতন নুরউদ্দিন জেনগি তাকে ফাতেমীয় মিশরে প্রেরণ করেন। ক্রুসেডারদের আক্রমণের বিরুদ্ধে সামরিক সাফল্যের মাধ্যমে সালাহউদ্দীন ফাতেমীয় সরকারের উচ্চপদে পৌঁছান। ফাতেমীয় খলিফা আল আদিদের সাথে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। ১১৬৯ সালে তার চাচা শেরকোহ মৃত্যুবরণ করলে আল আদিদ সালাহউদ্দীনকে তার উজির নিয়োগ দেন। নেতৃত্বাধীন খিলাফতে মুসলিমদের এমন পদ দেয়া বিরল ঘটনা ছিল। উজির থাকাকালে তিনি ফাতেমীয় শাসনের প্রতি বিরূপ ছিলেন। আল আদিদের মৃত্যুর পর তিনি ক্ষমতা গ্রহণ করেন এবং বাগদাদের আব্বাসীয় খিলাফতের আনুগত্য ঘোষণা করেন। পরবর্তী বছরগুলোতে তিনি ফিলিস্তিনে ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালান, ইয়েমেনে সফল বিজয় অভিযানের আদেশ দেন এবং উচ্চ মিশরে ফাতেমীয়পন্থি বিদ্রোহ উৎখাত করেন।
১১৭৪ সালে নূরউদ্দিনের মৃত্যুর অল্পকাল পরে সালাহউদ্দীন সিরিয়া বিজয়ে ব্যক্তিগতভাবে নেতৃত্ব দেন। দামেস্কের শাসকের অনুরোধে তিনি শান্তিপূর্ণভাবে শহরে প্রবেশ করেন। ১১৭৫ সালের মধ্যভাগে তিনি হামা ও হিমস জয় করেন। জেনগি নেতারা তার বিরোধী হয়ে পড়ে। সরকারিভাবে তারা সিরিয়ার শাসক ছিল। এরপর শীঘ্রই তিনি জেনগি সেনাবাহিনীকে পরাজিত করেন এবং আব্বাসীয় খলিফা আল মুসতাদি কর্তৃক মিশর ও সিরিয়ার সুলতান ঘোষিত হন। উত্তর সিরিয়া ও জাজিরায় তিনি আরও অভিযান চালান। এসময় হাশিশীনদের দুটি হত্যাচেষ্টা থেকে তিনি বেঁচে যান। ১১৭৭ সালে তিনি মিশরে ফিরে আসেন। ১১৮২ সালে আলেপ্পো জয়ের মাধ্যমে সালাহুদ্দিন সিরিয়া জয় সমাপ্ত করেন। তবে জেনগিদের মসুলের শক্তঘাঁটি দখলে সমর্থ হননি।
সালাহউদ্দীনের ব্যক্তিগত নেতৃত্বে আইয়ুবী সেনারা ১১৮৭ সালে হাত্তিনের যুদ্ধে ক্রুসেডারদের পরাজিত করে। এর ফলে মুসলিমদের জন্য ক্রুসেডারদের কাছ থেকে ফিলিস্তিন জয় করা সহজ হয়ে যায়। এর ৮৮ বছর আগে ক্রুসেডাররা ফিলিস্তিন দখল করে নিয়েছিল। ক্রুসেডার ফিলিস্তিন রাজ্য এরপর কিছুকাল বজায় থাকলেও হাত্তিনের পরাজয় এই অঞ্চলে মুসলিমদের সাথে ক্রুসেডার সংঘাতের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। সালাহউদ্দীন ছিলেন মুসলিম, আরব, তুর্কি ও কুর্দি সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব।[৭] ১১৯৩ সালে তিনি দামেস্কে মৃত্যুবরণ করেন। তার অধিকাংশ সম্পদ তিনি তার প্রজাদের দান করে যান। উমাইয়া মসজিদের পাশে তাকে দাফন করা হয়। সেখানে তার মাজার অবস্থিত।
সালাহুদ্দিন আইয়ুবী মেসোপটেমিয়ার তিকরিতে জন্মগ্রহণ করেন। তার ব্যক্তিগত নাম ইউসুফ, সালাহুদ্দিন হল লকব যার অর্থ “বিশ্বাসের ন্যায়পরায়ণ”।[৮] তার পরিবার কুর্দি বংশোদ্ভূত[৪] এবং মধ্যযুগীয় আর্মেনিয়ার ডিভিন শহর থেকে আগত।[৯][১০] নুরউদ্দিন জেনগি ছিলেন তার নানা। এসময় তার নিজ রাওয়াদিদ গোত্র আরবিভাষী বিশ্বের অংশ হয়ে যায়।[১১] সালাহউদ্দিনের যুগে শেখ আবদুল কাদের জিলানীর চেয়ে বেশি প্রভাব আর কোনো পণ্ডিতের ছিল না এবং সালাহউদ্দিন তার ও তার শিষ্যদের দ্বারা দৃঢ়ভাবে প্রভাবিত ও সহায়তা পেয়েছিলেন। ১১৩২ সালে মসুলের শাসক ইমাদউদ্দিন জেনগির পরাজিত সেনাবাহিনী পিছু হটার সময় টাইগ্রিসের দিকে বাধাপ্রাপ্ত হয়। এসময় সালাহুদ্দিনের পিতা নাজমুদ্দিন আইয়ুব এখানকার তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন। তিনি সেনাদের জন্য ফেরির ব্যবস্থা করেন এবং তাদের তিকরিতে আশ্রয় দেন।
মুজাহিদউদ্দিন বিহরুজ নামক একজন প্রাক্তন গ্রিক দাস এসময় উত্তর মেসোপটেমিয়ায় সেলজুক পক্ষের সামরিক গভর্নর ছিলেন। তিনি জেনগিদের সাহায্য করার জন্য আইয়ুবের বিরোধী হন। ১১৩৭ সালে আইয়ুবের ভাই আসাদউদ্দিন শিরকুহ বিহরুজের এক বন্ধুকে সম্মান রক্ষার লড়াইয়ে হত্যা করার পর তাকে তিকরিত থেকে বিতাড়িত করেন। বাহাউদ্দিন ইবনে শাদ্দাদের মতে যে রাতে সালাহুদ্দিনের পরিবার তিকরিত ত্যাগ করে সে রাতেই তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ১১৩৯ সালে আইয়ুব ও তার পরিবার মসুলে চলে আসেন। এখনে ইমাদউদ্দিন জেনগি তাদের পূর্ব অবদান স্বীকার করে আইয়ুবকে বালবিকের দুর্গের কমান্ডার নিয়োগ দেন। ১১৪৬ সালে ইমাদউদ্দিনের মৃত্যুর পর তার পুত্র নুরউদ্দিন জেনগি আলেপ্পোর অভিভাবক এবং জেনগি রাজবংশের নেতা হন।
এসময় সালাহুদ্দিন দামেস্কে বসবাস করছিলেন। বলা হয় যে তিনি এই শহরের প্রতি দুর্বল ছিলেন। তবে তার অল্প বয়সের তথ্য বেশি পাওয়া যায় না। শিক্ষা সম্পর্কে তিনি লিখেছেন, “বড়রা যেভাবে বৃদ্ধি পেয়েছেন সেভাবে শিশুদের গড়ে তোলা হয়”। তার একজন জীবনীকার আল ওয়াহরানির মতে সালাহুদ্দিন ইউক্লিড, আলমাজেস্ট, পাটিগণিত ও আইন সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তর দিতে পারতেন।[১৪] কিছু সূত্র মতে ছাত্রাবস্থায় তিনি সামরিক বাহিনীর চেয়ে ধর্মীয় বিষয়ে বেশি আগ্রহী ছিলেন।[১৫] ধর্মীয় বিষয়ে তার আগ্রহে প্রভাব ফেলা আরেকটি বিষয় হল প্রথম ক্রুসেডের সময় খ্রিষ্টানদের কর্তৃক জেরুজালেম অধিকার।[১৫] ইসলাম ছাড়াও বংশবৃত্তান্ত, জীবনী এবং আরবের ইতিহাস ও পাশাপাশি আরব ঘোড়ার রক্তধারা সম্পর্কে তার জ্ঞান ছিল। আবু তামামের রচিত হামাশ তার সম্পূর্ণ জানা ছিল।[১৪] তিনি কুর্দি এবং তুর্কি ভাষায় কথা বলতে পারতেন।[১৬]এবং তিনি ছিলেন একজন কুর্দি।
সার্ভার | ডাউনলোড লিংক |
---|---|
সার্ভার-১ |
|
সার্ভার-২ |
|
ভিডিও সার্ভার
শিরকুহ মিশরে শাওয়ার ও প্রথম আমালরিকের সাথে ক্ষমতার লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়েন। এতে শাওয়ার আমালরিকের সহায়তা চান। বলা হয় যে ১১৬৯ সালে শাওয়ার সালাহুদ্দিন কর্তৃক নিহত হন। এরপরের বছর শিরকুহ মৃত্যুবরণ করেন।[২২] নুরউদ্দিন শিরকুহর জন্য উত্তরাধিকারী বাছাই করেন। কিন্তু আল আদিদ সালাহুদ্দিনকে শাওয়ারের স্থলে উজির নিয়োগ দেন।[২৩]
শিয়া খলিফার অধীনে একজন সুন্নিকে উজির মনোনীত করার কারণ নিয়ে একাধিক মত রয়েছে। ইবনে আল আসিরের দাবি করেছেন যে খলিফার উপদেষ্টারা “সালাহুদ্দিনের চেয়ে ছোট বা দুর্বল কেউ নেই” এবং “একজন আমিরও তার আনুগত্য বা তার অধীনতা মানে না” এমন পরামর্শ দেয়ার কারণে তাকে নিয়োগ দেয়া হয়। এ মতানুযায়ী কিছু মতবিরোধের পর অধিকাংশ আমির তাকে মেনে নেন। আল আদিদের উপদেষ্টারা সিরিয়া ভিত্তিক জেনগি ধারাকে ভেঙে দেয়ার উদ্দেশ্য পোষণ করছিলেন। আল ওয়াহরানি লিখেছেন যে সালাহুদ্দিনের পরিবারের সুনাম ও তার সামরিক দক্ষতার জন্য তাকে নিয়োগ দেয়া হয়। ইমাদউদ্দিন আল ইসফাহানির লিখেছেন যে শিরকুহর জন্য সংক্ষিপ্তকালের শোকের পর জেনগি আমিররা সালাহুদ্দিনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেন এবং তাকে উজির হিসেবে নিয়োগ দেয়ার জন্য খলিফাকে চাপ দেন। যদিও বিদ্রোহী মুসলিম নেতাদের কারণে অবস্থা জটিল ছিল, বেশ কিছু সিরিয়ান শাসক মিশরীয় অভিযানে অবদানের জন্য সালাহুদ্দিনকে সমর্থন করেন।[২৪]
আমীর হওয়ার পর তিনি প্রভূত ক্ষমতা ও স্বাধীনতা অর্জন করলেও পূর্বের চেয়েও বেশি পরিমাণে আল আদিদ ও নুরউদ্দিনের মধ্যে আনুগত্যের প্রশ্নের সম্মুখীণ হয়। সে বছরের পরবর্তীকালে মিশরীয় সেনাদের একটি দল ও তার আমিররা সালাহুদ্দিনকে হত্যার চেষ্টা চালায়। কিন্তু তার প্রধান গোয়েন্দা আলি বিন সাফওয়ানের গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে তা প্রকাশ পেয়ে যায়। ষড়যন্ত্রকারী নাজি, ফাতেমীয় প্রাসাদের বেসামরিক নিয়ন্ত্রণকর্তা মুতামিন আল খিলাফাকে গ্রেপ্তার ও হত্যা করা হয়। এরপরের দিন ফাতেমীয় সেনাবাহিনীর রেজিমেন্টের ৫০,০০০ কালো আফ্রিকান সেনা সালাহুদ্দিনের শাসনের বিরুদ্ধে বেশ কিছু মিশরীয় আমিরের সাথে বিরোধীতা করে এবন বিদ্রোহে করে। ২৩ আগস্ট সালাহুদ্দিন এই উত্থান বিনাশ করেন এবং এরপর কায়রো থেকে কোনো সামরিক হুমকি আসেনি।[২৫]